ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে ১৫ দিনে (১৫-২৯ এপ্রিল) দেশে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ১৬৭ জনই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
মঙ্গলবার (২ মে) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবার সড়ক দুর্ঘটনা ১৮ দশমিক ২ শতাংশ ও প্রাণহানি ২১ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।
সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদুল ফিতরে আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, সড়ক, রেল ও নৌ-পথে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৪১টি। মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৫৫ জনের এবং আহত হয়েছেন ৬২০ জন।
মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত গরমসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভাল ছিল। যার কারণে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমেছে।
\
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। ঈদে ১৬৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৭ জন নিহত, ১২০ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৪.৩ শতাংশ, নিহতের ৫১ শতাংশ এবং আহতের ২১.৩ শতাংশ প্রায়।
এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৮৮ চালক, ১৬ পরিবহণ শ্রমিক, ৪২ পথচারী, ৪৮০ শিশু ১৭ শিক্ষার্থী, ১ সাংবাদিক, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ শিক্ষক, ৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩২ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় মিলেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-ভ্যান করি, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কার মাইক্রো জিপ, ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নছিমন-করিমন ট্রাক্টর-লেগুনা মাহিদা, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ অটোরিক্সা, ১২ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যাটারি রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান সাইকেল ও ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনায়, ২০ দশমিক ৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ার ঘটনায়, ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি নমুনা রির্পোট বলা যায়। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে তা সংবাদমাধ্যমে আসে না। তাই এসব দুর্ঘটনার হিসাব রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এবারের ঈদে শুধুমাত্র ঈদের দিনে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর সময় দুর্ঘটনায় ২১৬ জন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৬ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর।
তিনি জানান, ঈদের ২য় দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০৫ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। কেবল পঙ্গু হাসপাতালে এই ২ দিনে ভর্তি রোগীর সমপরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনার খবরও সংবাদপত্রে আসেনি। ফলে এসব দুর্ঘটনার ভয়াবহতার খবর আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরতেও পারিনি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ।