গরমে ঘামাচির জ্বালা মেটাতে ভরে ভরে পাউডার ঢালছেন? কী ক্ষতি হচ্ছে শুনুন চিকিৎসকের মুখেই

অ্যামাজনের গ্রেট সামার সেলের শেষদিন- স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, এসির এবার সবচেয়ে সস্তায় গরম বাড়তেই ত্বকের নানা সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। স্কিনব়্যাশের প্রকোপ বেড়েছে। মুখে, হাতে, পায়ে চুলকানি বা লাল ভাবের মতো সমস্য়াও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আরও একটি সমস্যা কমবেশি সবার মধ্যেই দেখা যায়। গরম বাড়তেই গায়ে, হাত-পায়ে ঘামাচি দেখা দেয়। পিঠেও ভরে যায় ঘামাচি। শুরুতে সমস্যা কম থাকলেও সঠিক সময়ে ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট না করলেই কিন্তু ঘামাচির সমস্যা বড় আকার নিতে পারে।

ছোট থেকে বড়, সবাই এই সমস্যার শিকার হতে পারেন। ঘামাচি দেখা দিলে কী করতে হবে, কী ভাবে যত্ন নিতে হবে ত্বকের? এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে আমরা হাজির হয়েছিলাম কলকাতা শহরের বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, ডাঃ অনুশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। গরমে ঘামাচির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক। বিস্তারিত আলোচনা করা হল প্রবন্ধে

গরম পড়তেই ঘামাচি কেন হয়?
ত্বকরন্ধ্রে ঘাম জমে থাকার কারণেই ঘামাচি বের হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দেয় গরমেই। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকলে কিংবা অতিরিক্ত পরিমাণে ঘাম হলেই ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

​ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। চুলকানি বা জ্বালা করতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে সেখানে ছোট ছোট স্কিনব়্যাশ দেখা যায়।

ঘামাচি হলে সেই স্থানে পাউডার দেওয়া উচিত?
কম-বেশি প্রত্যেক বাঙালি পরিবারেই গরমকালে পাউডার মাখার প্রচলন রয়েছে। ঘামাচি হলে প্রথমেই ত্বকের সেই স্থানে ভরে ভরে পাউডার মেখে থাকেন অনেকেই।

প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে, পাউডার মাখলেই ঘামাচি ঠিক হয়ে যেতে পারে। টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনেও এরকম বার্তা পেয়ে থাকি আমরা। কিন্তু পাউডার মাখলে ঘামাচির সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলে সাবধান করলেন ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ, অনুশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। তার কারণও বিশ্লেষণ করেন তিনি।

কেন পাউডার মাখা উচিত নয়?
ত্বকরন্ধ্রে ঘাম জমেই কিন্তু ঘামাচি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এই কথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি।

চিকিৎসক অনুশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, “পাউডার লাগানোর পরেই ঘামের গ্রন্থি বদ্ধ হয়ে যায়। তাই ত্বকরন্ধ্র বদ্ধ হওয়ার কারণে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। ত্বকের সেই অংশে প্রদাহ হতে পারে। ফলে, ত্বকে অ্যাকনেও দেখা দিতে পারে। ভয়াবহ সংক্রমণও হতে পারে।”

আর কী কী পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক
গরমকালে সুতির হালকা পোশাক পরামর্শ দিলেন ডাঃ গঙ্গোপাধ্যায়। সিন্থেটিক চাপা পোশাক এই সময়ে না পরাই ভালো। তাতে ত্বকের সমস্যা বাড়বে এবং ঘামাচি হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হবে।
অনেকেই ঘামাচি হলে ত্বকের সেই স্থানে সঙ্গে সঙ্গে বাজারচলতি অ্য়ান্টিসেপটিক লোশন, ক্রিম বা সলিউশন লাগিয়ে নেন। এমনটা করাও উচিত নয়। এতে ত্বকের সেই স্থানে জ্বালা করে। সেই নির্দিষ্ট অংশের ত্বকে চিরস্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে বলে সতর্ক করলেন চিকিৎসক। তাই ঘামাচি হলে সেই স্থানে এই ধরনের অ্যান্টিসেপটিক লোশন না লাগানোই উচিত।
নিম পাতা ফুটানো জলও সংক্রমিত স্থানে সঙ্গে সঙ্গে না ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক অনুশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়।
তাহলে কী করণীয়?
ঘামাচি হলে সেই স্থানটি তুলো দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর সেই স্থানে আপনি বরফ লাগাতে পারেন। দিনে ২-৩ বার বরফ লাগানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বরফের পরিবর্তে ঠান্ডা জলও ব্যবহার করা যায়।
ক্যালামাইন জাতীয় লোশন ১-২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।

তবে বরফ লাগানোর পরেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনওরকম ঘরোয়া টোটকায় ভরসা না করাই ভালো। ভুল পদক্ষেপে ত্বকের চিরতরে ক্ষতি হতে পারে।

Leave a Comment