‘রান্নাঘরের চুলা জ্বালানোর আগে দরজা-জানালা খুলে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে রান্না করুন। যেকোনো প্রয়োজনে তিতাস হটলাইন- ১৬৪৯৬ নম্বরে কল করুন- তিতাস কর্তৃপক্ষ।’ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পাতায় সতর্কবার্তাটি অগ্নি-দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে পোস্ট করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির ঠিক পরেই ২৪ এপ্রিল, সোমবার রাত ১০ টার পর পর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। এবং মুহূর্তেই খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় পুরো ঢাকাবাসী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
আমরা যখন ঘরের সবাই বাইরে কোথাও যাই, স্বভাবতই নিরাপত্তার জন্য ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রেখে যাই। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকার কারণে, বিশেষ করে কয়েকদিনের জন্য ঘর বদ্ধ থাকলে একটা গোমট ভাব হয়। তাই ফিরে এসে দরজা-জানলা খুলে দিয়ে আমরা সেই গোমট ভাবটা দূর করি। আর এই কাজটা কমবেশি আমরা সবাই করে থাকি। তবু কখনো সখনো বেখেয়ালে ঘটে দুর্ঘটনা। ইদানীং প্রায়ই এমন দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়।
শুধু তাই নয়, রান্নাঘর এমন একটা জায়গা, যেটার পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাসের বিষয়টাই শুধু নয়, কাজের সময় রান্নাঘর সবচেয়ে বেশি নোংরা হয়। অনেক সময় তেল ছিটকে পড়ে গিয়ে মেঝে পিচ্ছিল হয়ে যায়। রান্নার তেল-ঝোল পড়ে চুলা, দেয়াল, জানালা তেল চিটচিটে হয়। আবার কেউ কেউ খাবারের উচ্ছিষ্ট, তরকারির অবশিষ্ট অংশ সিংকে ফেলে। যা একেবারেই অনুচিত। এতে পাইপে ধীরে ধীরে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যায়।
কিভাবে সতর্ক হবেন :
* বাইরে যাওয়ার আগে গ্যাসের লাইন চেক করে দেখুন কোথাও কোনো লিকেজ আছে কিনা।
* অনেক সময় চুলা বন্ধ করলেও চাবিটা সম্পূর্ণ বন্ধ হয় না। আর সেখান থেকে সামান্য পরিমাণে গ্যাস বের হতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ ঘর বন্ধ থাকলে সেই সামান্য গ্যাস থেকেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা।
* ঘরে ঢুকেই প্রথমে সমস্ত দরজা-জানালা খুলে দিন। আর খেয়াল করুন গ্যাসের গন্ধ লাগছে কিনা।
* সম্ভব হলে রান্নাঘরের জানালা সম্পূর্ণ বন্ধ না করে সামান্য ফাঁকা রাখুন।
* খাবারের উচ্ছিষ্ট বা অবশিষ্টাংশ সরাসরি ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন।
* তেল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে নিন।
* রান্নাঘরে কয়েকটা সুতি কাপড়ের টুকরো রাখবেন। অনেকের ভিজা হাত মুছে নেওয়ার অভ্যাস থাকে। তারা একটা সুতি কাপড় রাখবেন শুধুই হাত মোছার জন্য। আরেকটা রাখবেন রান্না শেষে চুলা আর দেয়ালে ছিটকে পড়া তেল-মসলা মুছতে। এতে করে রান্নাঘর পরিষ্কার আর জীবানুমুক্ত থাকবে।
* প্রতিদিনের ময়লা প্রতিদিন ফেলে দিবেন। না হয় ওসব নষ্ট হয়ে জীবানু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তিতাসের সতর্কতায় ১৫ মিনিট পর চুলা জ্বালানোর বিষয়ে অনেকে আপত্তি জানিয়েছেন। জরুরি কাজে বাইরে বের হতে হলে ১৫ মিনিট অপেক্ষা মানে অনেক সময়। ১৫ মিনিট মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন। ঘরে ঢুকেই আগে রান্নাঘরের জানালা খুলে দিন। ৫ মিনিটের জন্য ঘরের ফ্যানগুলোও ছেড়ে রাখতে পারেন। এরপর হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে আসতে যতটা সময় পাবেন, ততটুকুই যথেষ্ট। দেখবেন চোখের পলকে সময়টুকু শেষ হয়ে গেছে। রান্নাঘরে এগজাস্ট ফ্যান লাগিয়ে নিন। দাম ৮০০/- টাকা থেকে শুরু। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে আর গ্যাসও দূর করবে। আপনার বিপদের সম্ভাবনা কমবে, আর ১৫ মিনিট অপেক্ষার বিড়ম্বনাও আপনাকে সইতে হবে না। আবার ঝটপট যথাসময়ে আপনার জরুরি কাজে বের হতেও আর কোনো বাঁধা থাকবে না। যারা সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তারাও কেনার সময় খেয়াল করুন তাতে কোনো লিকেজ আছে কিনা। পাইপ লাইন ঠিক আছে কিনা। এতে আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই বড় কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। আর এ ধরনের দুর্ঘটনা শুধু আপনার পরিবার নয়, সমাজেও প্রভাব বিস্তার করে। একটু গুছিয়ে নিয়ে, খেয়াল করে চললেই জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়।v