শীতকালীন ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত

আমাদের কাছে শীতকাল মানেই পিঠাপুলির সময়। শীতে উষ্ণতার জন্য পোশাক কেনার তোড়জোড়। ঘোরাফেরাসহ অনেক আয়োজনই শীতকে ঘিরে আমরা করে থাকি। অথচ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকাল এলে নতুন উদ্দামে ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন। সাহাবিদের শীতকালকে কাজে লাগানোর নির্দেশ দিতেন। ভিন্ন রকমের প্রস্তুতি নিতে বলতেন।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল’ (মুসনাদে আহমাদ)।

শীতকালে রোজা-নামাজের সুযোগ অন্য সময়ের থেকে বেশি পাওয়া যায়। কারণ, রাত বড় হয় এবং দিন ছোট হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে’ (বায়হাকি)। অন্য হাদিসে আরও এসেছে, হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)–এর মৃত্যুর সময় তাকে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কাঁদছি না, বরং (রোজা রেখে) গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণা, শীতের রাতের নফল নামাজ এবং ইলমের আসরগুলোতে হাজির হয়ে আলেমদের সোহবত হারানোর জন্য আমি কাঁদছি।’তাই শীতকাল অবহেলা করে কাটানো আমাদের জন্য উচিত হবে না।

আমরা শীতকাল এলে পিঠাপুলি খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। শীতকাল যার জন্য বরকতময় সেটা ভুলে যাই। অথচ হাদিসে এসেছে, শীতকাল এলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগত! শীতকালে বরকত নাজিল হয়। শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’

অন্য হাদিসে আরও এসেছে, শীতকাল আগমন করলে উবাঈদ বিন উমায়ের (রা.) বলতেন, ‘হে কোরআনের ধারক! তোমাদের রাতগুলো তিলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা পড়তে থাকো। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখো।’ তীব্র ঠাণ্ডার সময় মানুষের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুযোগ রয়েছে। ছোট্ট একটি আমলের মাধ্যমেই সেই সুযোগ লাভ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো তীব্র ঠাণ্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল! হে আল্লাহ! জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন। তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা আমার কাছে তোমার জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম।’

সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জামহারি কী?

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘জামহারি এমন একটি ঘর, যাতে অবিশ্বাসী ও অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে এবং এর ভেতরে তীব্র ঠাণ্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।’

শীতের সময় অজুর ফজিলত রয়েছে অনেক। অথচ, অনেকে দেখা যায় ঠাণ্ডার কারণে অজু করতে অবহেলা করে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানাব না কিসে তোমাদের পাপ মোচন হবে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে?’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘অবশ্যই! হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, ‘শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ঠিকভাবে অজু করা’ (মুসলিম)।

অন্য হাদিসে আরও এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে—সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু’ (তাবরানি)।

অন্য হাদিসে আরও এসেছে, হজরত ওমর (রা.) তার ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শীতের দিনে ভালোভাবে অজু করা বড় গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।

Leave a Comment