দাসপ্রথা বিলোপে মহানবী (সা.)-এর প্রচেষ্টা

রাসুলুল্লাহ (সা.) শ্রমজীবী মানুষ ও দাসদাসীদের অধিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত সোচ্চার। তিনি সমাজ থেকে দাসপ্রথা বিলোপে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তার প্রচেষ্টার ফলে দাসরা শুধু মুক্তি পায়নি; বরং তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত হয়েছে। যেমন বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.) দাস থেকে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন হয়েছিলেন। তাঁর সম্পর্কে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘আবু বকর আমাদের নেতা, তিনি অন্য নেতাকে (বিলাল) মুক্ত করেছেন।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ : ৯/১২৫)

মহানবী (সা.)-এর উদ্যোগগুলো

দাসপ্রথা বিলোপ ও দাস-দাসীদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হলো :

১. জীবনসায়াহ্নে উপদেশ : রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের শেষ লগ্নে দাসদের সঙ্গে সদাচারের অসিয়ত করেন। আলী (রা.) বলেন, ‘নামাজ, নামাজ (নামাজের প্রতি যত্নশীল হও) এবং অধীনদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কোরো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৫৬)

২. দাসদের কষ্ট না দেওয়া : আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বলেন, একবার আমি আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। তখন পেছন হতে একটি শব্দ শুনতে পেলাম, হে আবু মাসউদ, জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার ওপর এর চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান যতটুকু তুমি তার ওপর ক্ষমতাবান। আমি পেছন থেকে এমন আওয়াজ দুবার শুনতে পেলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি, নবী (সা.)। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বাধীন (আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম)। তিনি (সা.) বললেন, তুমি যদি তাকে মুক্ত না করে দিতে তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে গ্রাস করত। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৫৯)
৩. মৌলিক অধিকার প্রদান : দাস-দাসীর মৌলিক অধিকার প্রদানে নবীজি (সা.)-এর নির্দেশ হলো, ‘তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই রয়েছে তার উচিত সে নিজে যা খায় তাকেও তা-ই খেতে দেওয়া, নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা-ই পরতে দেওয়া এবং তার অসাধ্য কোনো কাজ তার ওপর না চাপানো। আর যদি এমন কোনো কষ্টসাধ্য কাজের ভার তাকে দেওয়া হয় তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৫৮)

কোনো কোনো ফকিহ বলেন, দাসরা সাবালক ও অমুসলিম হলে তাদের ধর্মপালন ও উপাসনালয়ে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। (আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা, দাসত্ব অধ্যায়)

৪. মুক্তি লাভে সাহায্য : সালমান ফারেসি (রা.)-এর মালিক তিন শ খেজুর গাছ রোপণ ও ৪০ উকিয়া স্বর্ণের বিনিময়ে তাঁকে মুক্তি দানে সম্মত হয়। উল্লিখিত শর্ত পূরণে সাহাবিরা তাঁকে সাহায্য করেন। এমনকি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জন্য খেজুর গাছ রোপণ করেন। (মুস্তাদরিকে হাকিম, হাদিস : ৬৫৪১)
৫. অবিচারের প্রতিবিধান মুক্তি : রাসুলুল্লাহ (সা.) মুক্তিদানকেই দাসের প্রতি অবিচারের প্রতিবিধান ঘোষণা করেছেন। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার ক্রীতদাসকে চড় মারবে বা মারধর করবে, এর কাফফারা (প্রতিবিধান) হলো তাকে মুক্ত করে দেওয়া।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৬৮)
৬. পাপের প্রতিবিধান দাসমুক্তি : জিহার তথা স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করা এবং আল্লাহর নামে কসম করে তা ভঙ্গ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। কেউ এমন কাজে লিপ্ত হলে তার জন্য দায়মুক্তির একটি উপায় হলো দাসমুক্তি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে জিহার করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার আগে একটি দাস মুক্ত করতে হবে।…’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ৩

৭. মানুষকে দাসে পরিণত করা নিষিদ্ধ : ইসলাম দাসব্যবসাকে নিরুৎসাহিত করেছে। দাসব্যবসার পথ বন্ধ করতে স্বাধীন মানুষকে দাসে পরিণত করতে নিষিদ্ধ করেছে। নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হবো : ক. যে আমার নামে প্রতিজ্ঞা করল, তারপর তা ভঙ্গ করল, খ. যে স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে, গ. যে কোনো লোককে শ্রমিক নিয়োগ করল এবং তার থেকে কাজ পুরোপুরি আদায় করল, অথচ তার পারিশ্রমিক দিল না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৭০)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন

Leave a Comment