শেষ মুহূর্তে মায়ের প্রতি শিশুর ঈমানের আহ্বান

ফেরাউনের প্রাসাদে একজন মুমিন নারী কাজ করতেন। তিনি ফেরাউনের মেয়ের চুল আঁচড়িয়ে দিতেন। তাঁর মুমিন হওয়ার খবর ফাঁস হলে ফেরাউন তাঁকে তাঁর সব সন্তানসহ জ্বলন্ত কড়াইয়ে পুড়িয়ে মারে। মৃত্যুর আগমুহূর্তে দুগ্ধপোষ্য সন্তানের জন্য মায়ের মমতাবোধ জেগে ওঠে। তখন সেই কোলের শিশুই মাকে পরকালের শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহর প্রতি আগাধ বিশ্বাসের প্রতিদান হিসেবে সেই নারীকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।

আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল বলেছেন, ‘মেরাজের রাতে আমি খুবই সুঘ্রাণ অনুভব করি। আমি বললাম, হে জিবরাইল, এই সুগন্ধি কোত্থেকে আসছে? তিনি বললেন, তা ফেরাউনের মেয়ে ও তার সন্তানদের চুল আঁচড়িয়ে দেওয়া নারীর কাছ থেকে আসছে। আমি বললাম, তার এই মর্যাদা লাভের কারণ কী? তিনি বললেন, একদিন সে ফেরাউনের মেয়ের চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছিল। এমন সময় তার হাত থেকে চিরুনি পড়ে যায়। তখন সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তথা আল্লাহর নাম স্মরণ করে। তা শুনে ফেরাউনের মেয়ে বলল, আমার বাবা? সে বলল, না; বরং তিনি আমার ও তোমার বাবার রব মহান আল্লাহ। তখন ফেরাউনের মেয়ে বলল, আমি বিষয়টি তাকে (ফেরাউনকে) জানাব। সে বলল, ঠিক আছে। ফেরাউনের মেয়ে তাকে বিষয়টি জানায়। ফেরাউন সেই মেয়েকে ডেকে বলল, হে অমুক, আমি ছাড়া তোমার কি অন্য কোনো রব আছে? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। আমার ও তোমার রব হলেন আল্লাহ।

এ কথা শুনে ফেরাউন একটি বড় কড়াই এনে তা উত্তপ্ত করার নির্দেশ দেয়। এর পর তাতে সেই নারীকে তার সব সন্তানসহ নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়। সেই মুমিন নারী বলল, আপনার কাছে আমার একটি অনুরোধ আছে। ফেরাউন বলল, কী সেটা? সে বলল, আপনি আমার ও আমার সন্তানদের হাড়গুলো একটি কাপড়ে একত্র করে তা দাফন করবেন। ফেরাউন বলল, তোমার এই অনুরোধ আমরা রক্ষা করব। অতঃপর সেই মেয়ের সব সন্তানকে একে একে নিক্ষেপ করা হয়। শেষ পর্যায়ে তার এক দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল। তার জন্য মায়ের মন কাঁদছিল। এমন সময় সেই শিশু বলে উঠল, ‘হে আমার মা, আগুনে ঝাঁপ দাও। কেননা দুনিয়ার আজাব আখিরাতের আজাবের চেয়ে খুবই সামান্য।’ এরপর তাদের সবাইকে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, চার শিশু (দুগ্ধপোষ্য অবস্থায়) কথা বলেছে। ঈসা বিন মারয়াম (আ.), জুরাইজের ব্যাপারে সাক্ষ্যদাতা, ইউসুফ (আ.)-এর জন্য সাক্ষ্যদাতা ও ফেরাউনের মেয়ের চুল আঁচড়িয়ে দেওয়া নারীর সন্তান। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৮২১; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২৯০৩)

এদিকে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার মুমিন হওয়ার খবরও ফাঁস হয়। ফেরাউন তাকেও মর্মান্তিক শাস্তি দেওয়া শুরু করে। তখন আসিয়া আল্লাহর কাছে এই শাস্তি থেকে মুক্তির আহ্বান জানান। পবিত্র কোরআনে তা বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার রব, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফেরাউন ও তার কার্যক্রম থেকে রক্ষা করুন, আমাকে মুক্তি দিন জালিম সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা আত তাহরিম, আয়াত : ৬৬)

Leave a Comment