শিশুদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসা

আজকের শিশু আগামীর কর্ণধার। শিশুর নির্মল হাসি নিমেষেই দূর করে দেয় বাবা-মায়ের দুঃখ-কষ্ট। শৈশবের নিবিড় পরিচর্যা ও সুন্দর প্রতিপালনই শিশুকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করে তোলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তানরা পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং আপনার রবের কাছে স্থায়ী ভালো কাজ, সওয়াব ও আশা-আকাঙ্ক্ষা হিসেবে অনেক উত্তম।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৬)

ইসলামে শিশুর সঙ্গে কোমল ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিশুদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। তিনি তাদের সঙ্গে খেলা করতেন। আদর করতেন। স্নেহ ও আদরে তাদের মন ভরিয়ে দিতেন। নিম্নে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে শিশুদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো।

শিশুর সঙ্গে কোমল আচরণ : শিশুদের সঙ্গে আচরণ করা কর্তব্য। তারা ভুল করলে তা সুন্দর ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। আনাস (রা.) দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (সা.)-এর সেবায় কাটিয়েছেন। নিজের শৈশবের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, রাসুল (সা.) আমার কোনো কাজে আপত্তি করে কখনো বলেননি যে এমনটি কেন করেছ বা এমনটি কেন করোনি।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩০৯)

আমর ইবনে শুয়াইব (রহ.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান বোঝে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৪৪)

শিশুদের সঙ্গে সালাম বিনিময় : সালাম মুসলিমরা একে অপরের জন্য শান্তি কামনা করে। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও সম্প্রীতি তৈরি হয়। আনাস (রা.) নিজের শৈশবের কথা বর্ণনা করে বলেছেন, একদা রাসুল (সা.) আমাদের কাছে আসেন। আমরা কয়েকজন শিশু একসঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি আমাদের সালাম দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭০০)

সুসম্পর্ক তৈরি : রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে শিশুদের সম্পর্ক ছিল খুবই গভীর। আস্থা ও ভালোবাসার পাশাপাশি তারা ছিল মহানবীর অঙ্গীকার রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদা রাসুল (সা.) আমার কাছে আসেন। তখন আমি অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিলাম। তিনি আমাকে সালাম দিলেন। অতঃপর এক প্রয়োজনে পাঠান। আমি মায়ের কাছে আসতে দেরি করি। আমার মা জিজ্ঞাসা করল, তোমার দেরি হলো কেন? আমি বললাম, রাসুল (সা.) আমাকে এক প্রয়োজনে পাঠিয়েছেন। তিনি জানতে চাইলেন, কী প্রয়োজনে পাঠিয়েছেন? আমি বললাম, সেটা গোপন বিষয়। মা বললেন, তুমি রাসুল (সা.)-এর গোপন কথা কাউকে বলবে না। আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, হে সাবিত, আমি কাউকে বিষয়টি জানাতে চাইলে তোমাকেই জানাতাম। (মুসলিম, হাদিস : ২৪৮২)

শিশুদের চুমু দেওয়া : স্নেহ ও ভালোবাসায় শিশুদের চুমু দেওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) তাঁর দুই নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে কাছে টেনে নিতেন এবং চুমু দিতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে এক গ্রাম্য লোক এসে বলল, আপনি কি শিশুদের চুমু দেন? আমরা তো তাদের চুমু দিই না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার অন্তর থেকে দয়া তুলে নিলে আমার কী করার আছে?’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৮)

খেলায় অংশগ্রহণ : শিশুরা খেলাধুলায় অংশ নেবে এবং ঘরকে সব সময় মাতিয়ে রাখবে। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুল (সা.)-এর সামনে পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলায় অংশ নিত। রাসুল (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠাতেন। তারা আমার সঙ্গে খেলত। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩০)

কোমল আচরণের নির্দেশনা : জীবনের সব ক্ষেত্রে কোমল ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদল ইহুদি রাসুল (সা.)-এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে বলল, আস-সামু আলাইকুম (তোমার মৃত্যু হোক)। তখন আমি বললাম, বরং তোমাদের ওপর হোক। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আয়েশা, আল্লাহ কোমল। তিনি সব কিছুতে কোমলতা পছন্দ করেন।’ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি শোনেননি তারা কী বলেছে? রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি কি শোনোনি আমি কী বলেছি? আমি তাদের উত্তরে বলেছি, তোমাদের ওপরও।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৯৫)

Leave a Comment