দেশে শিক্ষিত উদ্যোক্তার সৃষ্টি হচ্ছে। দিন দিন শিক্ষিত তরুন ও যুবক উদ্যোক্তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দিনে আমাদের কোনো কিছুর জন্য আর আমদানি নির্ভর হতে হবে না। বলছিলাম সফল উদ্যোক্তা তারেক জামানের কথা।
এই উদ্যোক্তা দেশি মুরগির খামার করে তাক লাগিয়েছেন। তার খামারে অর্গানিকভাবে দেশি মুরগি পালন করা হয়। যা বিভিন্ন মাধ্যমে পৌছে যায় মানুষের কাছে। দেশি মুরগির খামারে তাকে সফল হতে দেখে অনেক বেকার যুবক উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হচ্ছেন।






জানা যায়, তারেক জামান নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের মাধবদী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে চাকরিতে যোগদান করেন। পর পর কয়েকটি নামকরা গার্মেন্টসে চাকরি করেছেন তিনি। পরে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন।
৪৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি দেশি মুরগির খামার করেন। প্রথমে অল্প পরিসরে শুরু করলেও পরে বড় আকারে খামার করেন। প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে দোতলা খামার করেন তিনি।
সেই খামারের নাম রাখেন টিএম অ্যাগ্রো ফার্ম। বর্তমানে খামার থেকে মাসে লাখ টাকা আয় হয় তার। বছরে ৫০ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন তিনি।
খামারটি ঘুরে দেখা যায়, খামারের চারপাশে জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া। খামারের উঠানে খোলা পরিবেশে ঘুরে ঘুরে খাবার খাচ্চে মুরগিগুলো। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতেই দোতলায় অফিস রুম।






পাশে রয়েছে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর অটো ইনকিউবেটর মেশিন। যেখানে ১৮ দিন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখার পর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। তারেক জামান পুরো খামারটিতে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির সমাহার ঘটিয়েছেন।
তিনি মুরগির বাচ্চাগুলোকে বয়স (একদিন থেকে ১২০ দিন বয়সী) অনুযায়ী ভাগ করে আটটি আলাদা জোনে (স্থানে) রাখেন। এক নম্বর জোনে একদিনের বাচ্চা, দুই নম্বর জোনে ১৫ দিনের বাচ্চা, তিন নম্বর জোনে ৩০ দিন, চার নম্বর জোনে ৪৫ দিন, পাঁচ নম্বর জোনে ৬০ দিন, ছয় নম্বর জোনে ৭৫ দিন, সাত নম্বর জোনে ৯০ দিন ও আট নম্বর জোনে ১২০ দিনের মুরগি থাকে
ফলে তিনি সহজেই মুরগিগুলোর যত্ন নিতে পারেন। এছাড়া কেউ এক বা ৩০ দিনের বাচ্চা চাইলে তিনি কম সময়েই জোন থেকে বের করে দিতে পারেন। আর খামারের নিচতলায় রয়েছে বিশাল গুদাম ঘর। যেখানে বস্তায় ভরে থরে থরে সাজানো রয়েছে নানা অর্গানিক খাদ্য।
এর পাশেই রয়েছে ডিম পাড়া মুরগির জোন। এখানে মুরগিগুলোর ডিম পাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মুরগির বয়স সাড়ে তিন মাস হলেই বাজারে বিক্রি করা হয়। একেকটি মুরগির ওজন হয় ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি।






উদ্যোক্তা তারেক জামান বলেন,আগে গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই দেশি মুরগি পালন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে মানুষ বাজারের ব্রয়লার আর সোনালি-পাকিস্তানি মুরগিতে প্রায় আসক্ত হয়ে আছে।
এইসব মুরগিতে আসক্ত হওয়ার কারণ হলো দেশি মুরগির পালন কমে যাওয়া। দেশি মুরগীর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ খুবই ভালো। সরবরাহ কম থাকায় মানুষ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমি দেশি মুরগি পালন করছি।
তিনি আরো বলেন, মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা করে ২০২০ সালে অর্গানিক টিএম অ্যাগ্রো ফার্ম গড়ে তুলি। বাড়িগর পাশে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ঘর করে ৫০০ মুরগি নিয়ে খামার শুরু করি।
প্রথমে নিজে ও পরে ৩ জন শ্রমিক রেখে খামার দেখাশোনার কাজ করি। প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে দোতলা খামার ঘর তৈরী করি। যেখানে প্রায় ১৫ হাজার মুরগি পালন করা যাবে। বর্তমান খামারে ৫ হাজার মুরগি পালন করছি। তাতেই মাসে লাখ টাকা আয় হচ্ছে।
একসাথে ১৫ হাজার মুরগি পালন করলে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। এছাড়া ভাবষ্যতে দেশি মুরগির পাশাপাশি হাঁস, ছাগল, কবুতর ও গরুর খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে।






তারেক আরো বলেন, খামারের মুরগির খাবারে কোনো কেমিক্যাল ফিড ব্যবহার করি না। অর্গানিক খাবার যেমন ধান, গম, ভূট্টা, কুড়া, খুদ, ঘাস খাওয়াই। যার কারণে মুরগির মাংসে কোনো ক্ষতিকর উপাদান থাকে না।
আর ব্রয়লার মুরগির তুলনায় দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। যার ফলে মুরগি রোগে আক্রান্ত হলেও সময় মতো ভ্যাকসিন দেওয়া হলে রোগ ভালো হয়ে যায়
আমি নিজেই মুরগি বাজারজাত করি। খামার থেকে ডিম সহ বয়সভেদে ১০ ধরনের মুরগি বিক্রি করি। পাইকাররা খামার থেকে মুরগি কিনে নিয়ে গেলেও অনলাইনের মাধ্যমে মুরগির বেচাকেনা করতে পারি।
চালু করেছি হোম ডেলিভারি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ক্রেতাকে লক্ষ্য করে হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। এছাড়াও আমার খামারের মুরগি নামকরা সুপারশপেও যায়। প্রতিকেজি মুরগি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের লাইভস্টক অফিসার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল শামীম বলেন, ব্রয়লার মুরগির তুলনায় দেশি মুরগি একটু দেড়িতে বড় হয়। তাই অনেক খামারিরা তাতে আগ্রহী হয় না।






ফলে ব্রয়লার মুরগি পালনে ঝুঁকে পড়ে। বাজারে দেশি মুরগির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ কম। দেশি মুরগি পালন খুবই লাভজনক। আমরা খামারিদের দেশি মুরগি পালনে উৎসাহিত করছি।