জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার গাঁওকুড়া জবেদা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাছিমা খাতুন। স্বামী মেয়র হওয়ার পর থেকেই স্কুলে যান না তিনি। তবে তার পরিবর্তে ক্লাস নেন অন্য এক নারী। অথচ বিদ্যালয়ে ক্লাস না করিয়ে মাসের পর মাস বেতন-ভাতা তুলছেন নাছিমা। তবে মেয়রের স্ত্রী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।






নাছিমা খাতুন ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল কাদের সেখের স্ত্রী। আবদুল কাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০১১ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
জামালপুরের ইসলামপুর পৌর এলাকায় ১৯৮৮ সালে গাঁওকুড়া জবেদা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে নাছিমা খাতুন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হয়। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নাছিমা খাতুনের স্বামী মো. আবদুল কাদের সেখ ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এর পর থেকে স্কুলে না গিয়ে তার পরিবর্তে মর্জিনা আক্তার নামে এক নারীকে মাসে ছয় হাজার টাকা দিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও মেয়রের স্ত্রী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
সরেজমিন দেখা দেখা মেলে মর্জিনা আক্তারের। তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে ক্লাস নিচ্ছেন। প্রথমে সময় সংবাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন। পরে প্রধান শিক্ষিকার সহায়তায় স্কুলে আসেন।
মর্জিনা আক্তার সময় সংবাদকে বলেন, ‘নাছিমা আক্তার মেয়রের বউ। তাদের ক্ষমতা অন্যরকম। চাকরি করে না, বাচ্চা নিয়ে জামালপুরে থাকে। নাছিমা খাতুনের পরিবর্তে আমি ক্লাস নিই। প্রতিদিনই স্কুলে আসি। ২০১৩ সাল থেকে ক্লাস নিচ্ছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা খাতুন বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই নাছিমা খাতুন স্কুলে আসেন না। তার পরিবর্তে মর্জিনা আক্তার স্কুলে ক্লাস নেয়। নাছিমার স্বামী মেয়র হওয়ার পর থেকেই স্কুলে আসেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।’
জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের প্রক্সি বিষয়ে জানতে পেরেছি। আমরা জানতাম না ওখানে প্রক্সি শিক্ষক আছেন। প্রক্সি শিক্ষকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আমরা খোঁজ নিচ্ছি, ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাছিমা খাতুনের স্বামী পৌর মেয়র আবদুল কাদের বলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক অসুস্থ। তার অসুস্থতার বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তারা জানেন। অসুস্থতার কারণে মাঝেমধ্যে আমার স্ত্রী বিদ্যালয়ে যেতে পারেন না। সেই দিনগুলোতে মর্জিনা ক্লাস নেন।’
বিদ্যায়লয়ে ২৪০ জন ছাত্রছাত্রীর বিপরীতে নাছিমা আক্তারসহ শিক্ষক আছেন পাঁচজন।